বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০: বাংলাদেশে সহজভাবে জানুন সবকিছু

বাংলাদেশে স্বর্ণ সবসময়ই এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০ জানাটা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, দেশে ফিরে পরিবার-পরিজনের জন্য স্বর্ণালংকার বা স্বর্ণের বার আনার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। কিন্তু নিয়ম না জানলে ঝামেলা হতে পারে-জরিমানা, বাজেয়াপ্ত বা আইনি জটিলতায় পড়ার ঝুঁকি থাকে। চলুন, সহজ ভাষায় জেনে নিই ২০২০ সালের নিয়ম-কানুন, উদাহরণ, এবং কিছু দরকারি টিপস।

আর্টিকেলের ভিতরে যা রয়েছে

বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম: কেন এত আলোচনায়?

বাংলাদেশে স্বর্ণের চাহিদা প্রচুর। প্রতিবছর লক্ষাধিক প্রবাসী দেশে ফেরেন এবং অনেকে স্বর্ণ নিয়ে আসেন। “বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০” বিষয়টি তাই শুধু প্রবাসীদের জন্য নয়, দেশের অর্থনীতি, স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং সরকারের রাজস্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম না মানলে স্বর্ণ বাজেয়াপ্ত হতে পারে, আবার নিয়ম মেনে আনলে মিলবে নির্ভরযোগ্যতা ও শান্তি।

ব্যাগেজ রুলস: কী বলছে আইন?

বাংলাদেশে বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার ক্ষেত্রে মূলত “ব্যাগেজ রুলস” অনুসরণ করতে হয়। এই নিয়মগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) নির্ধারণ করে। ২০২০ সালে কার্যকর থাকা নিয়মগুলো ছিল নিম্নরূপ:

বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০: বাংলাদেশে সহজভাবে জানুন সবকিছু

  • স্বর্ণালংকার:
    একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম (প্রায় ৮.৫৭ ভরি) স্বর্ণালংকার আনতে পারেন, এতে কোনো শুল্ক বা কর দিতে হয় না। তবে, এক ধরনের অলংকার ১২টির বেশি আনা যাবে না।
  • স্বর্ণের বার:
    ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) পর্যন্ত স্বর্ণের বার আনা যায়, তবে প্রতি ভরিতে ২,০০০ টাকা শুল্ক দিতে হয়। অর্থাৎ ২০ ভরি আনলে মোট ৪০,০০০ টাকা শুল্ক দিতে হবে।
  • শর্ত:
    একই ব্যক্তি বছরে একবারই এই সুবিধা নিতে পারবেন।
  • নারী যাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা:
    মহিলারা ১১৭ গ্রাম (১০ ভরি) স্বর্ণ শুল্ক ছাড়াই আনতে পারেন।
  • সংখ্যার সীমাবদ্ধতা:
    এক ধরনের অলংকার ১২টির বেশি আনা যাবে না।
  • অতিরিক্ত আনলে:
    নির্ধারিত সীমার বেশি স্বর্ণ আনলে তা বাজেয়াপ্ত হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

উদাহরণ দিয়ে বুঝুন

ধরা যাক, আপনি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরছেন। আপনার সঙ্গে আছে ৮ ভরি স্বর্ণের চেইন, ২ ভরি স্বর্ণের আংটি এবং ১টি স্বর্ণের বার (১৫ ভরি)। তাহলে কী হবে?

  • ৮ ভরি চেইন + ২ ভরি আংটি = ১০ ভরি (১১৭ গ্রাম)।
    আপনি নারী হলে শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন। পুরুষ হলে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত শুল্ক ছাড়াই, বাকিটা শুল্ক দিয়ে আনতে হবে।
  • ১৫ ভরি স্বর্ণের বার: প্রতি ভরিতে ২,০০০ টাকা করে শুল্ক দিতে হবে। মোট ৩০,০০০ টাকা।

বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০ – এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা

সুবিধা:

  • পরিবার-পরিজনের জন্য উপহার আনা সহজ।
  • নির্ধারিত সীমার মধ্যে আনলে ঝামেলা নেই।
  • দেশে বৈধভাবে স্বর্ণ প্রবেশের সুযোগ।

সীমাবদ্ধতা:

  • সীমার বেশি আনলে বাজেয়াপ্ত হতে পারে।
  • শুল্ক দিতে হয়, যা অনেকের কাছে বেশি মনে হতে পারে।
  • বছরে একবার সুবিধা পাওয়া যায়।
  • কোনো কোনো সময় নিয়ম পরিবর্তন হয়, তাই আপডেট থাকা জরুরি।

কেন এত নিয়ম?

স্বর্ণের বাজারে স্বচ্ছতা আনতে এবং চোরাচালান ঠেকাতে সরকার এই নিয়ম করেছে। অনেক সময় দেখা যায়, “বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০” না মানার কারণে স্বর্ণ বাজেয়াপ্ত হয় বা জরিমানা গুনতে হয়। তাই নিয়ম জানা ও মানা খুবই দরকার।

প্রবাসীদের জন্য কিছু দরকারি টিপস

  • রিসিট ও কাগজপত্র:
    বিদেশ থেকে স্বর্ণ কিনলে অবশ্যই রিসিট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন।
  • নিয়মিত আপডেট দেখুন:
    ব্যাগেজ রুলস প্রায়ই পরিবর্তন হয়। তাই NBR-এর ওয়েবসাইট বা সংবাদমাধ্যমে নিয়ম দেখে নিন।
  • স্বর্ণের ওজন ও সংখ্যা:
    নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকুন। এক ধরনের অলংকার ১২টির বেশি আনবেন না।
  • শুল্কের টাকা প্রস্তুত রাখুন:
    স্বর্ণের বার আনলে শুল্ক দিতে হবে-এটা মাথায় রাখুন।
  • অন্যের জন্য আনবেন না:
    নিজের নামে স্বর্ণ আনুন, অন্যের অনুরোধে বেশি আনলে ঝামেলা হতে পারে।

বাংলাদেশে স্বর্ণের বাজার ও আমদানি নীতিমালা

বাংলাদেশে স্বর্ণের বাজার অনেকাংশেই “বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০” এর ওপর নির্ভরশীল। কারণ, দেশের বার্ষিক চাহিদার বড় অংশই প্রবাসীদের মাধ্যমে আসে। তবে সরকারের নতুন স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি করতে পারেন। তবুও, বেশিরভাগ স্বর্ণ আসে প্রবাসীদের মাধ্যমে।

ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা

  • লাইসেন্স:
    স্বর্ণ আমদানি করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও NBR-এর অনুমোদিত লাইসেন্স লাগবে।
  • শুল্ক ও ট্যাক্স:
    ব্যবসায়ীদের জন্য শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর রয়েছে, যা সাধারণ যাত্রীর চেয়ে বেশি।
  • ব্যবসায়িক স্বর্ণ ও ব্যক্তিগত স্বর্ণ:
    ব্যবসায়িক স্বর্ণ আমদানির নিয়ম আলাদা, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ব্যাগেজ রুলস প্রযোজ্য।

স্বর্ণ আনার সময় যেসব ভুল এড়িয়ে চলবেন

বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০: বাংলাদেশে সহজভাবে জানুন সবকিছু

  • নিয়ম না জেনে স্বর্ণ আনবেন না।
  • সীমার বেশি আনলে শুল্ক না দিয়ে লুকিয়ে আনবেন না।
  • অন্যের অনুরোধে নিজের নামে স্বর্ণ আনবেন না।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও রিসিট ছাড়া স্বর্ণ আনবেন না।

বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০ নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন

নিচে “বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০” নিয়ে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQ) দেওয়া হলো:

সচরাচর জিজ্ঞাস্য

বিদেশ থেকে কত ভরি স্বর্ণ আনতে পারবো?

বিদেশ থেকে ফিরলে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম (প্রায় ৮.৫৭ ভরি) স্বর্ণালংকার শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন। স্বর্ণের বার আনতে চাইলে সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) পর্যন্ত আনতে পারবেন, তবে শুল্ক দিতে হবে।

নারী যাত্রীরা কি আলাদা কোনো সুবিধা পান?

হ্যাঁ, নারী যাত্রীরা ১১৭ গ্রাম (১০ ভরি) স্বর্ণ শুল্ক ছাড়াই আনতে পারেন, যা পুরুষদের চেয়ে কিছুটা বেশি।

এক ধরনের স্বর্ণালংকার কতটি পর্যন্ত আনা যাবে?

এক ধরনের স্বর্ণালংকার সর্বোচ্চ ১২টি পর্যন্ত আনা যাবে। এর বেশি আনলে কাস্টমস জটিলতা হতে পারে।

স্বর্ণের বার আনলে শুল্ক কত দিতে হবে?

প্রতি ভরিতে ২,০০০ টাকা হারে শুল্ক দিতে হবে। অর্থাৎ ২০ ভরি আনলে মোট ৪০,০০০ টাকা শুল্ক দিতে হবে।

এক বছরে কয়বার এই সুবিধা নিতে পারবো?

একজন যাত্রী বছরে একবারই এই সুবিধা নিতে পারবেন। একাধিকবার নিলে আইনগত জটিলতা হতে পারে।

স্বর্ণ কিনলে কি রিসিট বা কাগজপত্র লাগবে?

হ্যাঁ, বিদেশ থেকে স্বর্ণ কিনলে অবশ্যই রিসিট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। কাস্টমস চাইলে তা দেখাতে হবে।

নিয়মের বাইরে স্বর্ণ আনলে কী হবে?

নির্ধারিত সীমার বেশি স্বর্ণ আনলে তা বাজেয়াপ্ত হতে পারে এবং জরিমানা বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

স্বর্ণালংকার ও স্বর্ণের বার একসঙ্গে আনতে পারবো?

হ্যাঁ, আপনি চাইলে স্বর্ণালংকার ও স্বর্ণের বার একসঙ্গে আনতে পারবেন, তবে নির্ধারিত সীমা ও শর্ত মেনে চলতে হবে।

ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে স্বর্ণ আনতে চাইলে কী করতে হবে?

ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে স্বর্ণ আনতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদিত লাইসেন্স থাকতে হবে এবং নির্ধারিত শুল্ক, ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হবে।

নিয়ম পরিবর্তন হলে কোথায় জানতে পারবো?

বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০ বা পরবর্তী আপডেট জানতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, সংবাদমাধ্যম অথবা কাস্টমস অফিসে যোগাযোগ করুন।

ভবিষ্যতের পরিবর্তন: নিয়মের আপডেট

সরকার প্রায়ই “বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০” আপডেট করে থাকে। তাই, বিদেশ থেকে দেশে ফেরার আগে সর্বশেষ নিয়ম জেনে নিন। ভবিষ্যতে সীমা কমানো বা বাড়ানো, শুল্কের হার পরিবর্তন, অথবা বিশেষ ক্যাটাগরি চালু হতে পারে।

সংক্ষেপে-মনে রাখার মতো বিষয়

  • ১০০ গ্রাম (৮.৫৭ ভরি) স্বর্ণালংকার শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন।
  • ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) স্বর্ণের বার আনতে পারবেন, প্রতি ভরিতে ২,০০০ টাকা শুল্ক।
  • এক ধরনের অলংকার ১২টির বেশি নয়।
  • বছরে একবার সুবিধা।
  • নিয়ম না মানলে বাজেয়াপ্ত ও জরিমানা।

উপসংহার

বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০ জানা থাকলে আপনি নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে স্বর্ণ আনতে পারবেন। নিয়ম মেনে চললে কাস্টমসে ঝামেলা হবে না, আবার পরিবারের জন্যও উপহার নিয়ে আসা সহজ হবে। তাই, বিদেশ থেকে দেশে ফেরার আগে অবশ্যই নিয়মগুলো জেনে নিন এবং প্রয়োজনে কাস্টমস অফিস বা NBR-এর ওয়েবসাইটে দেখে নিন সর্বশেষ আপডেট। আপনার স্বর্ণের নিরাপত্তা ও দেশের স্বার্থ-দুটোই রক্ষা হবে।

এখনই এই তথ্যটি আপনার প্রবাসী বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, যাতে সবাই “বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার নিয়ম ২০২০” সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারে। নিয়ম মেনে নিরাপদে স্বর্ণ আনুন, পরিবারকে খুশি করুন!

Scroll to Top