সাদা স্বর্ণ কি: বৈচিত্র্য, চেনার উপায় ও বাংলাদেশের বাজারদর

বাংলাদেশে গহনার জগতে সাদা স্বর্ণ বা হোয়াইট গোল্ড এখন এক নতুন আকর্ষণ। দেখতে প্লাটিনামের মতো ঝকঝকে, আবার দামে ও স্থায়িত্বে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু আসলে সাদা স্বর্ণ কি? কিভাবে চেনা যায় আসল হোয়াইট গোল্ড, আর বাংলাদেশে এর ভরি কত? চলুন, আজকের এই পোস্টে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিই এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিই।

আর্টিকেলের ভিতরে যা রয়েছে

সাদা স্বর্ণ কি: সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা

সাদা স্বর্ণ কি-এই প্রশ্নের উত্তর জানতে গেলে প্রথমে বুঝতে হবে স্বর্ণ কত প্রকার। সাধারণত আমরা হলুদ রঙের খাঁটি সোনা চিনি, যেটা ২৪ ক্যারেট বিশুদ্ধ সোনা। কিন্তু গহনা তৈরিতে ২৪ ক্যারেট সোনা খুব নরম বলে, এতে অন্যান্য ধাতু (যেমন নিকেল, প্যালাডিয়াম, রূপা) মিশিয়ে শক্ত ও টেকসই করা হয়। যখন এই মিশ্রণে সোনার সঙ্গে অন্তত একটি সাদা ধাতু মেশানো হয়, তখন সেটি হয়ে ওঠে সাদা স্বর্ণ বা হোয়াইট গোল্ড।

সাদা স্বর্ণের রঙ স্বাভাবিকভাবে একটু সাদাটে-হলুদ, তবে গহনার চমক বাড়াতে এর ওপর রোডিয়াম নামক এক প্রকার সাদা ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়। এতে গয়না আরও উজ্জ্বল ও চকচকে দেখায়

স্বর্ণ কত প্রকার ও সোনার খাদ কি

স্বর্ণ সাধারণত তিনটি প্রধান ক্যারেটে পাওয়া যায়:

  • ২৪ ক্যারেট: ৯৯.৯% বিশুদ্ধ (খাঁটি) সোনা
  • ২২ ক্যারেট: ৯১.৬% সোনা + ৮.৪% অন্যান্য ধাতু (খাদ)
  • ১৮ ক্যারেট: ৭৫% সোনা + ২৫% খাদ

এখানে “খাদ” বলতে বোঝায়-সোনার সঙ্গে মেশানো অন্যান্য ধাতু, যা সোনাকে শক্ত, টেকসই ও বিভিন্ন রঙে রূপান্তরিত করে। সাদা স্বর্ণে সাধারণত খাদ হিসেবে নিকেল, প্যালাডিয়াম, রূপা ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

হোয়াইট গোল্ড কি ও কেন জনপ্রিয়

হোয়াইট গোল্ড কি-এটি আসলে খাঁটি সোনা নয়, বরং সোনা ও সাদা ধাতুর সংমিশ্রণ। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য:

সাদা স্বর্ণ কি: বৈচিত্র্য, চেনার উপায় ও বাংলাদেশের বাজারদর

  • দেখতে প্লাটিনামের মতো, কিন্তু দামে তুলনামূলক কম
  • টেকসই ও শক্ত
  • গহনার জন্য আদর্শ, বিশেষত আংটি, চেইন, কানের দুল ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়
  • সময়ের সঙ্গে রোডিয়াম প্রলেপ উঠে যেতে পারে, তবে পুনরায় পালিশ করা যায়

সাদা স্বর্ণ চেনার উপায় ও হোয়াইট গোল্ড চেনার উপায়

অনেকেই জানতে চান-সাদা স্বর্ণ চেনার উপায় বা হোয়াইট গোল্ড চেনার উপায় কী? আসুন, কিছু সহজ কৌশল দেখে নিই:

  • হলমার্ক চিহ্ন: আসল সাদা স্বর্ণে নির্দিষ্ট ক্যারেটের হলমার্ক বা স্ট্যাম্প থাকে (যেমন ১৮K, ২২K)। বাংলাদেশে BSTI অনুমোদিত হলমার্ক দেখে কিনুন।
  • রোডিয়াম প্রলেপ: সাদা স্বর্ণের ওপর চকচকে রোডিয়াম প্রলেপ থাকে, যা সাধারণত প্লাটিনামের মতো উজ্জ্বল দেখায়।
  • অ্যাসিড টেস্ট: সোনার গয়না ঘষে অ্যাসিড টেস্ট করলে আসল সোনার রঙ পরিবর্তন হয় না, তবে নকল বা খাদযুক্ত সোনার রঙ বদলে যেতে পারে4।
  • চুম্বক পরীক্ষা: খাঁটি সোনা বা হোয়াইট গোল্ড চুম্বকে আকৃষ্ট হয় না। নকল ধাতু থাকলে আকৃষ্ট হতে পারে।
  • ভিনেগার টেস্ট: সাদা স্বর্ণে কয়েক ফোঁটা ভিনেগার দিলে রঙ পরিবর্তন হয় না, নকল হলে রঙ বদলাবে।
  • বিশ্বস্ত দোকান: সবসময় বিশ্বস্ত জুয়েলার্স থেকে হলমার্কযুক্ত গয়না কিনুন।

হোয়াইট গোল্ড এর ভরি কত: ২০২৩ ও ২০২৫ সালের বাজারদর

বাংলাদেশে হোয়াইট গোল্ড বা সাদা স্বর্ণের দাম সাধারণত হলুদ সোনার সমান বা কিছুটা বেশি হতে পারে, কারণ এতে রোডিয়াম প্রলেপ ও মূল্যবান সাদা ধাতু ব্যবহৃত হয়।

২০২৩ ও ২০২৫ সালের কিছু আপডেটেড দাম:

ক্যারেট প্রতি ভরি দাম (২০২৫)
২৪ ক্যারেট সাদা সোনা ১,২২,৬১১ টাকা
২২ ক্যারেট সাদা সোনা ১,২২,৫৫৭ টাকা
১৮ ক্যারেট সাদা সোনা ৯১,৯৫৮ টাকা
১৪ ক্যারেট সাদা সোনা ৭১,৭২১ টাকা

এছাড়া, প্রতি গ্রাম ২৪ ক্যারেট সাদা সোনার দাম ১০,৫১২ টাকা, ২২ ক্যারেটের দাম ৯,৬৫০ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ৭,৮৮৪ টাকা (২০২৫ সালের মার্চের তথ্য)।

কোন ফসলকে সাদা সোনা বলে?

বাংলাদেশে “সাদা সোনা” শুধু ধাতু নয়, একটি বিশেষ ফসলেরও উপাধি। প্রশ্ন আসে-কোন ফসলকে সাদা সোনা বলে? উত্তর: চিংড়ি। বাংলাদেশে চিংড়ি রপ্তানি থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসে, তাই একে “সাদা সোনা” বলা হয়। আবার, তুলা (cotton) ফসলকেও আন্তর্জাতিকভাবে “সাদা সোনা” বলা হয়, কারণ তুলার আর্থিক গুরুত্ব অনেক বেশি।

সাদা স্বর্ণ বনাম প্লাটিনাম বনাম রূপা বনাম হলুদ সোনা

বৈশিষ্ট্য সাদা স্বর্ণ (হোয়াইট গোল্ড) প্লাটিনাম রূপা হলুদ সোনা
গঠন সোনা + সাদা ধাতু (নিকেল, প্যালাডিয়াম) প্রায় ৯৫% খাঁটি প্লাটিনাম খাঁটি রূপা + তামা খাঁটি সোনা + তামা, রূপা
দাম প্লাটিনামের চেয়ে কম, হলুদ সোনার কাছাকাছি বা বেশি সবচেয়ে বেশি তুলনামূলক কম সাদা সোনার চেয়ে কম বা সমান
রঙ সাদাটে, উজ্জ্বল সাদাটে-ধূসর উজ্জ্বল সাদা হলুদ
স্থায়িত্ব রোডিয়াম প্রলেপে টেকসই খুব টেকসই কম টেকসই টেকসই
ব্যবহার গহনা, আংটি, চেইন গহনা, আংটি গহনা, বাসন গহনা, মুদ্রা

বাংলাদেশে সাদা স্বর্ণের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা

বাংলাদেশে বিয়ে, বাগদান বা উপহার হিসেবে হোয়াইট গোল্ডের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে যারা প্লাটিনামের ঝকঝকে চেহারা পছন্দ করেন, কিন্তু কম বাজেটে গহনা কিনতে চান, তাদের কাছে সাদা স্বর্ণ আদর্শ। এছাড়া, হোয়াইট গোল্ডের গয়না হীরা বা রত্নপাথরের সঙ্গে খুব সুন্দর মানিয়ে যায়।

সাদা স্বর্ণ কি: বৈচিত্র্য, চেনার উপায় ও বাংলাদেশের বাজারদর

সাদা স্বর্ণের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ

  • রোডিয়াম প্রলেপ উঠে গেলে পুনরায় পালিশ করান
  • কেমিক্যাল, পারফিউম বা ঘাম থেকে দূরে রাখুন
  • নরম কাপড়ে মুছে রাখুন

মূল পয়েন্ট: সাদা স্বর্ণ কি-সংক্ষেপে

  • সাদা স্বর্ণ কি: সোনা ও সাদা ধাতুর সংমিশ্রণ, দেখতে প্লাটিনামের মতো
  • সাদা স্বর্ণ চেনার উপায়: হলমার্ক, রোডিয়াম প্রলেপ, অ্যাসিড টেস্ট, চুম্বক টেস্ট
  • হোয়াইট গোল্ড এর ভরি কত: ১৮ ক্যারেটের দাম ৯১,৯৫৮ টাকা (২০২৫)
  • কোন ফসলকে সাদা সোনা বলে: বাংলাদেশে চিংড়ি, আন্তর্জাতিকভাবে তুলা
  • সোনার খাদ কি: সোনার সঙ্গে মিশ্রিত অন্যান্য ধাতু
  • স্বর্ণ কত প্রকার: ২৪K, ২২K, ১৮K (ক্যারেট অনুযায়ী)
  • হোয়াইট গোল্ড চেনার উপায়: হলমার্ক, রোডিয়াম প্রলেপ, রাসায়নিক পরীক্ষা

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

বাংলাদেশে সাদা সোনা কী?

বাংলাদেশে “সাদা সোনা” বলতে সাধারণত চিংড়িকে বোঝানো হয়। দেশের রপ্তানিজাত মৎস্য পণ্যের বড় অংশ চিংড়ি, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই কারণে চিংড়িকে “সাদা সোনা” বলা হয়।

স্বর্ণ সাদা হয় কেন?

স্বর্ণ স্বাভাবিকভাবে হলুদ রঙের হলেও, সাদা স্বর্ণ তৈরি করতে খাঁটি সোনার সঙ্গে নিকেল, প্যালাডিয়াম, রূপা বা অন্যান্য সাদা ধাতু মেশানো হয়। এই ধাতুগুলোর সংমিশ্রণে স্বর্ণের রঙ সাদাটে হয়ে যায় এবং পরে রোডিয়াম প্রলেপ দিয়ে আরও চকচকে ও উজ্জ্বল করা হয়।

হোয়াইট গোল্ড কী?

হোয়াইট গোল্ড হলো এক ধরনের সংকর ধাতু, যেখানে খাঁটি সোনার সঙ্গে নিকেল, প্যালাডিয়াম, রূপা ইত্যাদি সাদা ধাতু মেশানো হয়। এটি দেখতে প্লাটিনামের মতো সাদাটে ও ঝকঝকে এবং গহনা তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

সাদা স্বর্ণ বলতে কি বুঝায়?

সাদা স্বর্ণ বলতে বোঝানো হয় সেই স্বর্ণ, যেটি খাঁটি সোনার সঙ্গে সাদা ধাতু মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এটি সাধারণ হলুদ সোনার চেয়ে দেখতে আলাদা এবং গহনা তৈরিতে জনপ্রিয়।

সাদা স্বর্ণের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?

সাদা স্বর্ণ দেখতে সাদাটে ও উজ্জ্বল, সাধারণত রোডিয়াম প্রলেপে চকচকে হয়। এটি শক্ত ও টেকসই, তাই আংটি, চেইন, কানের দুল ইত্যাদি গহনা তৈরিতে বেশি ব্যবহৃত হয়।

সাদা স্বর্ণের দাম সাধারণত কত?

সাদা স্বর্ণের দাম সাধারণ হলুদ সোনার কাছাকাছি বা কিছুটা বেশি হতে পারে, কারণ এতে অতিরিক্ত রোডিয়াম প্রলেপ ও মূল্যবান সাদা ধাতু ব্যবহৃত হয়। ক্যারেট ও বাজারদরের ওপর নির্ভর করে এর দাম নির্ধারিত হয়।

সাদা স্বর্ণ চেনার উপায় কী?

সাদা স্বর্ণ চেনার জন্য হলমার্ক চিহ্ন দেখা, রোডিয়াম প্রলেপ পরীক্ষা, চুম্বক ও অ্যাসিড টেস্ট করা যেতে পারে। এছাড়া, বিশ্বস্ত দোকান থেকে হলমার্কযুক্ত গয়না কেনা নিরাপদ।

বাংলাদেশে সাদা সোনার গুরুত্ব কী?

বাংলাদেশে সাদা সোনা (চিংড়ি) দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। এটি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয় এবং লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়।

সাদা স্বর্ণের অসুবিধা কী?

সাদা স্বর্ণের রোডিয়াম প্রলেপ সময়ের সঙ্গে উঠে যেতে পারে, ফলে পুনরায় পালিশ করতে হয়। এছাড়া, কিছু মানুষের নিকেল অ্যালার্জি হতে পারে।

স্বর্ণ কত প্রকার এবং কোনগুলো?

স্বর্ণ সাধারণত তিনটি প্রধান ক্যারেটে পাওয়া যায়: ২৪ ক্যারেট (খাঁটি), ২২ ক্যারেট ও ১৮ ক্যারেট। এছাড়া, খাদ মিশিয়ে বিভিন্ন রঙের স্বর্ণ যেমন সাদা, লাল, সবুজ, কালো ইত্যাদি তৈরি করা যায়।

 

উপসংহার 

আপনি যদি আধুনিক, টেকসই ও স্টাইলিশ গহনা কিনতে চান, তাহলে হোয়াইট গোল্ড বা সাদা স্বর্ণ হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। তবে, সাদা স্বর্ণ চেনার উপায় জানুন এবং সবসময় বিশ্বস্ত জুয়েলার্স থেকে হলমার্কযুক্ত গয়না কিনুন। বাংলাদেশের বাজারে হোয়াইট গোল্ড এর ভরি কত, তা নিয়মিত জেনে নিন এবং নিজের বাজেট ও রুচি অনুযায়ী সেরা গয়না বেছে নিন।

আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে-সাদা স্বর্ণ কি, হোয়াইট গোল্ড চেনার উপায়, বা সাদা স্বর্ণের দাম নিয়ে-তাহলে কমেন্টে জানান বা আমাদের ওয়েবসাইটে ঘুরে আসুন! নতুন তথ্য ও আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন, এবং আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না!

আপনার স্বর্ণ কেনার অভিজ্ঞতা কেমন? নিচে কমেন্টে জানিয়ে দিন!

Scroll to Top