স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: তামিলনাড়ুর সোনালি আধ্যাত্মিক স্বর্গ

ভারতের দক্ষিণে গেলে চোখে পড়বে এক অপরূপ স্বর্ণ মন্দির ভেলোর, যা আজকের দিনে বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। সোনালি মন্দিরের নাম শুনলেই মনে পড়ে অমৃতসরের কথা, কিন্তু দক্ষিণ ভারতের ভেলোরে অবস্থিত এই স্বর্ণ মন্দির ভেলোর তার নিজস্ব ঐশ্বর্য, আধ্যাত্মিকতা এবং স্থাপত্যের জন্য বিশ্বব্যাপী আলোচিত। যদি আপনি আধ্যাত্মিক শান্তি, ইতিহাস আর প্রকৃতির মেলবন্ধন খুঁজছেন, তাহলে স্বর্ণ মন্দির ভেলোর আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য।

আর্টিকেলের ভিতরে যা রয়েছে

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: কেন দেখবেন?

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর, যার স্থানীয় নাম শ্রীপুরম স্বর্ণ মন্দির, তামিলনাড়ুর ভেলোর শহরের কাছে অবস্থিত এক অনন্য স্থাপত্য ও আধ্যাত্মিক গন্তব্য। এই মন্দিরটি শুধু তার বিশালত্ব ও সৌন্দর্য দিয়েই নয়, বরং এর আধ্যাত্মিক পরিবেশ এবং বিশ্বমানের নির্মাণশৈলীর জন্য সারা ভারত তথা বাংলাদেশ থেকেও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। যদি আপনি ধর্মীয় স্থান, স্থাপত্যকলা কিংবা প্রকৃতির মাঝে শান্তি খুঁজে থাকেন, তাহলে স্বর্ণ মন্দির ভেলোর আপনার জন্য এক আদর্শ গন্তব্য।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: ইতিহাস ও স্থাপত্য

স্বর্ণ মন্দির ভেলোরের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়, তবে এর স্থাপত্য ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অপরিসীম। শ্রী শক্তি আম্মা নামে একজন আধ্যাত্মিক নেতার উদ্যোগে ২০০১ সালে এর নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০০৭ সালে এর উদ্বোধন করা হয়। মন্দিরটি প্রায় ১০০ একর জমির উপর অবস্থিত এবং এর মূল অংশটি সোনার পাত দ্বারা আবৃত, যা একে সত্যিকার অর্থে ‘স্বর্ণ মন্দির ভেলোর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মন্দিরের প্রধান দেবতা দেবী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণী, যিনি সম্পদ ও সমৃদ্ধির দেবী হিসেবে পূজিত হন। মন্দিরের গম্বুজ ও মণ্ডপম (আর্ধমণ্ডপম) সোনার পাত দিয়ে ঢাকা, যা প্রায় ১৫০০ কেজি বিশুদ্ধ সোনা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটি অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরের চেয়েও বেশি সোনা ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। মন্দিরের প্রতিটি কারুকার্য হাতে তৈরি এবং এতে প্রাচীন বৈদিক স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: কেন্দ্রীয় আকর্ষণ

  • সোনার গম্বুজ ও মণ্ডপম: মন্দিরের গম্বুজ ও মণ্ডপম সোনার পাত দিয়ে ঢাকা, যা সূর্যের আলোয় ঝলমল করে ওঠে।
  • তারকা আকারের পথ: মন্দিরে প্রবেশের মূল পথটি তারকা আকারে বিন্যস্ত, যা শান্তি ও শক্তি প্রদানকারী হিসেবে বিবেচিত।
  • বিস্তৃত উদ্যান: মন্দিরের চারপাশে সুবিশাল ও সুসজ্জিত উদ্যান, যেখানে প্রকৃতির মাঝে ধ্যান ও বিশ্রাম নেওয়া যায়।
  • ধর্মীয় অনুষ্ঠান: নিয়মিত পূজা, আরতি ও বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, যা ভক্তদের জন্য এক বিশেষ অভিজ্ঞতা।
  • প্রবেশ ফি ও নিয়ম: স্বর্ণ মন্দির ভেলোর-এ প্রবেশের জন্য কোনো ফি দিতে হয় না এবং এখানে সবার জন্য উন্মুক্ত।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: ভ্রমণের টিপস

  • পরিধেয় পোশাক: মন্দিরে প্রবেশের সময় শালীন ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত।
  • সময়সূচী: মন্দির সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
  • আচরণ: মন্দিরে প্রবেশের সময় মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা বা সাইলেন্ট মোডে রাখা উচিত।
  • প্রতিবন্ধক: মন্দিরের ভেতরে নিরামিষ খাবার ছাড়া অন্য কিছু খাওয়া নিষিদ্ধ। অ্যালকোহল ও ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
  • সময় বরাদ্দ: মন্দির ও এর আশপাশের উদ্যান ঘুরে দেখতে কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখুন।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: বাংলাদেশ থেকে যেভাবে যাবেন

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর (Golden Temple Vellore) হলো ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের একটি বিখ্যাত ধর্মীয় ও পর্যটন স্থান। এটি তার স্বর্ণে মোড়ানো স্থাপত্য এবং সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। অনেক বাংলাদেশি ভক্ত এবং পর্যটক প্রতি বছর এই মন্দির পরিদর্শন করতে আগ্রহী হন।

বাংলাদেশ থেকে এই মন্দিরে যেতে হলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

প্রথম ধাপ: চেন্নাই বা ব্যাঙ্গালোর পৌঁছানো

  • বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ভেলোরে যাওয়ার বিমান নেই। তাই প্রথমে আপনাকে চেন্নাই (Chennai) অথবা ব্যাঙ্গালোর (Bangalore) শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে।

  • ঢাকা থেকে সপ্তাহে একাধিক ফ্লাইট চেন্নাই ও ব্যাঙ্গালোরের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। আপনি সময়, মূল্য এবং ভিসার ধরন দেখে উপযুক্ত ফ্লাইট বেছে নিতে পারেন।

দ্বিতীয় ধাপ: চেন্নাই বা ব্যাঙ্গালোর থেকে ভেলোর যাত্রা

  • চেন্নাই বা ব্যাঙ্গালোরে নামার পর আপনি বাস, ট্রেন বা ট্যাক্সি করে ভেলোর শহরে যেতে পারবেন।

  • চেন্নাই থেকে ভেলোরের দূরত্ব প্রায় ১৪০ কিলোমিটার এবং ব্যাঙ্গালোর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার।

  • বাস ও ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে এবং ভ্রমণ সময় গড়ে ৩-৫ ঘণ্টা।

তৃতীয় ধাপ: ভেলোর শহর থেকে স্বর্ণ মন্দির যাত্রা

  • ভেলোর শহরে পৌঁছানোর পর মন্দিরটি দেখতে আর বেশি দূর যেতে হবে না। স্বর্ণ মন্দির শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

  • আপনি স্থানীয় বাস, অটো রিকশা বা ট্যাক্সি ব্যবহার করে সহজেই মন্দিরে পৌঁছে যেতে পারবেন।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: তামিলনাড়ুর সোনালি আধ্যাত্মিক স্বর্গ

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: কেন এটি দেখার মতো?

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর শুধু একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, এটি একটি স্থাপত্য ও শিল্পকলার নিদর্শন। এখানে আপনি একইসাথে ধর্মীয় অনুভূতি, শান্তি ও স্থাপত্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। মন্দিরের বিশাল সোনার গম্বুজ ও মণ্ডপম, তারকা আকারের পথ এবং সুবিশাল উদ্যান আপনার ভ্রমণকে এক অনন্য অভিজ্ঞতায় পরিণত করবে।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: স্থানীয় সংস্কৃতি ও আতিথেয়তা

স্বর্ণ মন্দির ভেলোরে ভক্তদের জন্য কোনো প্রবেশ ফি নেই এবং সবার জন্য উন্মুক্ত। মন্দিরের ট্রাস্ট সবার জন্য বিনামূল্যে খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা করে। এখানে কেউ কেউ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন, যা স্থানীয় সংস্কৃতি ও আতিথেয়তার এক অনন্য উদাহরণ। বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটকদের জন্য এখানে স্থানীয় ভাষাভাষী গাইডেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর-এ প্রবেশের পর আপনি প্রথমেই তারকা আকারের পথে হাঁটবেন, যা শান্তি ও শক্তি প্রদানকারী হিসেবে বিবেচিত। এরপর আপনি মন্দিরের মূল গম্বুজ ও মণ্ডপমে প্রবেশ করবেন, যা সোনার পাত দিয়ে ঢাকা। মন্দিরের ভেতরে দেবী লক্ষ্মী নারায়ণীর মূর্তি দর্শন করতে পারবেন এবং পূজা-অর্চনা করতে পারবেন। মন্দিরের চারপাশের উদ্যানে হাঁটতে পারবেন এবং প্রকৃতির মাঝে ধ্যান করতে পারবেন।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: স্থানীয় খাবার ও বাজার

ভেলোর স্বর্ণ মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, এটি দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতি, রান্না ও বাজারজগতের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটি চমৎকার সুযোগও বটে।

 স্থানীয় খাবারের স্বাদ

স্বর্ণ মন্দিরের আশেপাশে আপনি দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যবাহী ও স্বাস্থ্যকর খাবারের স্বাদ পেতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • ইডলি: ভাপানো চাল ও ডাল দিয়ে তৈরি নরম ও হালকা খাবার, সাধারণত নারকেল চাটনি ও সাম্বার দিয়ে পরিবেশিত হয়।
  • ডোসা: পাতলা ও ক্রিস্পি প্যানকেক, যা চাল ও ডালের ব্যাটার দিয়ে তৈরি। এটি আলুর পুর বা চাটনির সঙ্গে খাওয়া হয়।
  • সাম্বার: ডাল ও সবজি দিয়ে তৈরি ঝাল ও খাস্তা তরকারি, যা প্রায় সব খাবারের সঙ্গেই পরিবেশিত হয়।
  • রসম: পাতলা টক-মিষ্টি ঝোল জাতীয় একটি স্যুপ, যা গরম ভাতে চমৎকার লাগে।
  • পোঙ্গল: দক্ষিণ ভারতের একটি জনপ্রিয় খাবার, যা চালে ও ডালে তৈরি হয়ে ঘি ও মশলা দিয়ে রান্না হয়।

এই খাবারগুলি শুধুমাত্র স্বাদেই নয়, পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ। মন্দির এলাকায় ছোট ছোট খাবারের দোকান বা স্টল থাকায়, পর্যটকরা সহজেই স্থানীয় খাবার উপভোগ করতে পারেন।

হোটেল ও রেস্তোরাঁ

ভেলোর শহরে আপনি বিভিন্ন ধরণের হোটেল ও রেস্তোরাঁ পাবেন – সাশ্রয়ী থেকে বিলাসবহুল পর্যন্ত।

  • যারা নিরামিষ খেতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য প্রচুর অপশন আছে।
  • আমিষভোজীদের জন্যও অনেক জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেখানে তাজা মাছ, চিকেন ও মাটনের পদ পাওয়া যায়।

স্থানীয় বাজার ও স্যুভেনির

স্বর্ণ মন্দিরের চারপাশে বেশ কিছু ছোট ছোট দোকান ও বাজার দেখা যায়। এখানে আপনি কিনতে পারেন:

  • স্থানীয় হস্তশিল্প: কাঠ, ধাতু বা পাথরের কাজ, হাতে আঁকা সামগ্রী ইত্যাদি।
  • পুজোর সামগ্রী: ধূপ, প্রদীপ, মূর্তি ইত্যাদি।
  • শ্যুভেনির: ছোট স্বর্ণ মন্দিরের মডেল, চাবির রিং, ট্র্যাডিশনাল পোশাক বা শাড়ি ইত্যাদি যা ভেলোরের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাখা যায়।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: ভ্রমণের সেরা সময়

ভেলোরের স্বর্ণ মন্দির বা “Golden Temple” দেখতে সারা বছরই পর্যটকরা আসেন। তবে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল হচ্ছে সবচেয়ে ভালো সময় এই মন্দির ভ্রমণের জন্য। কারণ এই সময় আবহাওয়া শীতল ও আরামদায়ক থাকে। ভ্রমণকারীদের হাঁটাচলা করতে বা মন্দির চত্বর উপভোগ করতে সুবিধা হয়।

এই সময়ে মন্দিরের চারপাশে থাকা বাগান ও উদ্যান সবুজ এবং আকর্ষণীয় থাকে, যা পুরো পরিবেশকে আরও সুন্দর করে তোলে।

গ্রীষ্মকালে (মার্চ থেকে জুন) তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে, তাই দিনে ঘোরাঘুরি করা কষ্টকর হয়। এই সময় যদি কেউ মন্দির দর্শনে যান, তবে সকালবেলা বা সন্ধ্যাবেলা যাওয়াই ভালো, কারণ তখন গরম কিছুটা কম থাকে।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: ভ্রমণ পরিকল্পনা

প্রথম দিন: ভেলোর শহরে পৌঁছান এবং হোটেলে চেক ইন করুন।
ভেলোর একটি জনপ্রিয় পর্যটন শহর, বিশেষ করে স্বর্ণ মন্দিরের জন্য। প্রথম দিনটা বিশ্রামের জন্য রাখুন। ট্রেন বা গাড়িতে ভ্রমণের পর হোটেলে গিয়ে চেক ইন করে বিশ্রাম নিন। চাইলে আশেপাশে হালকা ভ্রমণও করতে পারেন।

দ্বিতীয় দিন: সকালে স্বর্ণ মন্দির ভেলোর ভ্রমণ করুন এবং মন্দিরের উদ্যানে সময় কাটান।
এটাই ভ্রমণের মূল আকর্ষণ। শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণী স্বর্ণ মন্দির (Sripuram Golden Temple) তার সোনালী নির্মাণশৈলীর জন্য বিখ্যাত। সকালে ঘুরতে গেলে ভিড় কম থাকে এবং মন্দিরের সৌন্দর্য উপভোগ করা সহজ হয়। পাশাপাশি মন্দিরের পাশে সুন্দর উদ্যানে সময় কাটানো যায়, যা মানসিক প্রশান্তি দেয়।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: তামিলনাড়ুর সোনালি আধ্যাত্মিক স্বর্গ

তৃতীয় দিন: ভেলোর শহরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান যেমন ভেলোর দুর্গ, জৈন মন্দির ইত্যাদি দেখুন।
এই দিনে আপনি ভেলোরের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দিকটা ঘুরে দেখতে পারেন।

  • ভেলোর দুর্গ: একটি ঐতিহাসিক দুর্গ যা দক্ষিণ ভারতের মুসলিম ও হিন্দু স্থাপত্যের মিশ্রণ।
  • জৈন মন্দির: স্থানীয় জৈন ধর্মাবলম্বীদের তৈরি একটি শান্তিপূর্ণ স্থান।

চতুর্থ দিন: চেন্নাই বা ব্যাঙ্গালোরের দিকে ফিরে যান এবং ফ্লাইট ধরুন।
যেহেতু ভেলোর বড় শহর নয়, আপনি চেন্নাই বা ব্যাঙ্গালোরের কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরে যেতে পারেন। সেদিন সকালে রওনা দিয়ে বিকেলে বা রাতে ফ্লাইট ধরলে আরামদায়ক হয়।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর কোথায় অবস্থিত?

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর, যার আসল নাম শ্রীলক্ষ্মী নারায়ণী মন্দির, ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ভেলোর শহরের নিকটে শ্রীপুরম নামক এলাকায় অবস্থিত। এটি একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় ও পর্যটন কেন্দ্র।

স্বর্ণ মন্দির কি সত্যিই সোনার তৈরি?

হ্যাঁ, মন্দিরের মূল আকর্ষণ হল এর গম্বুজ ও মণ্ডপমে ব্যবহৃত প্রায় ১৫০০ কেজি বিশুদ্ধ সোনার পাত। এটি ভারতের সবচেয়ে দামি মন্দিরগুলোর একটি, এবং প্রকৃত অর্থেই “স্বর্ণ মন্দির”।

কখন গেলে সবচেয়ে ভালো?

শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) হল এই মন্দির ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময়। কারণ এই সময়ে তামিলনাড়ুর আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা ও আরামদায়ক থাকে, যা দর্শনার্থীদের জন্য উপযুক্ত।

 প্রবেশ ফি কি রয়েছে?

না, মন্দিরে প্রবেশ করতে কোনো টাকা লাগে না। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত ও বিনামূল্যে।

খোলা ও বন্ধের সময়সূচি

মন্দিরটি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে উৎসবের দিন বা বিশেষ পূজার সময়সূচি ভিন্ন হতে পারে।

কী ধরনের পোশাক পরা উচিত?

এটি একটি ধর্মীয় স্থান হওয়ায়, শালীন ও ঢিলেঢালা পোশাক পরাই উত্তম। ছোট পোশাক, গা ঘেঁষা জামা বা খোলামেলা পোশাক এড়িয়ে চলা উচিত।

খাবার সংক্রান্ত নিয়ম

মন্দির চত্বরে শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার গ্রহণ করা যায়। আমিষ, অ্যালকোহল ও ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

সময় লাগবে কতটা?

পুরো মন্দির এলাকা, আশেপাশের বাগান, প্রার্থনার স্থান ঘুরে দেখতে ২-৩ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখাই ভালো।

বাংলাদেশ থেকে কিভাবে যাবেন?

  1. প্রথমে বিমানে চেন্নাই বা ব্যাঙ্গালোর শহরে পৌঁছাতে হবে।
  2. সেখান থেকে বাস বা ট্রেনে করে ভেলোর শহরে যেতে হবে।
  3. ভেলোর শহর থেকে শ্রীপুরম স্বর্ণ মন্দির মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার দূরে

কি কি নিয়ম মানতে হয়?

  • মোবাইল সাইলেন্ট বা বন্ধ রাখতে হবে।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
  • মন্দিরে সাফ-সুতরো, ধর্মীয় ভাব বজায় রাখা পোশাক পরতে হবে।
  • শুধু নিরামিষ খাবার খেতে হবে।

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর: শেষ কথা

ভেলোরের স্বর্ণ মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় উপাসনাস্থল নয়, এটি বহু দিক থেকে মানুষের মন ও মননকে ছুঁয়ে যায়। এর স্থাপত্যশৈলী এতটাই নিখুঁত ও চিত্তাকর্ষক যে এটি যেকোনো পর্যটকের মনে দাগ কেটে যায়। পুরো মন্দিরটি সোনালী আবরণে আবৃত, যা সূর্যালোকের ছোঁয়ায় ঝলমল করতে থাকে এবং এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।

শিল্পকলার দিক থেকেও এটি এক অপূর্ব নিদর্শন। প্রতিটি খোদাই, প্রতিটি ডিজাইন ধর্মীয় ভাবনার সঙ্গে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মিলনে তৈরি। আপনি যদি প্রকৃতির ভালোবাসায় মুগ্ধ হন, তাহলে এখানকার শান্ত, সবুজ পরিবেশ এবং পরিপাটি করে রক্ষণাবেক্ষণ করা বাগান আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেবে।

এই মন্দিরে গেলে আপনি শুধু প্রার্থনার অনুভূতি পাবেন না, বরং একধরনের আধ্যাত্মিক শান্তি অনুভব করবেন। এটি এমন একটি স্থান, যেখানে ধর্মীয় অনুশাসন, শিল্প, প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মিকতা একত্রিত হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে ভেলোরে যাওয়া এখন বেশ সহজ, বিশেষ করে চেন্নাই হয়ে রোড বা ট্রেনপথে। এজন্য অনেক ভক্ত ও পর্যটক প্রতিবছর এই মন্দিরে ঘুরতে যান। তাই যদি আপনি এক অন্যরকম ভ্রমণ ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা চান, তাহলে স্বর্ণ মন্দির ভেলোর আপনার জন্য সঠিক গন্তব্য হতে পারে।

এই মন্দিরের ভ্রমণ আপনার জীবনে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।

এখনই পরিকল্পনা করুন!

স্বর্ণ মন্দির ভেলোর দেখার জন্য এখনই আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা শুরু করুন। আপনার পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে এই অপূর্ব স্থানটি ঘুরে দেখুন এবং এক অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। ভ্রমণের আগে অবশ্যই আবহাওয়া, ভিসা ও অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করুন। স্বর্ণ মন্দির ভেলোর আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!

Scroll to Top