স্বর্ণ চেনার উপায়: বাংলাদেশে আসল সোনা চেনার সহজ কৌশল

বাংলাদেশে সোনা কেনা মানেই শুধু অলংকার নয়, বরং এটি একটি মূল্যবান বিনিয়োগও। কিন্তু নকল সোনার ফাঁদে পড়ে অনেকেই প্রতারিত হন। তাই সঠিকভাবে স্বর্ণ চেনার উপায় জানা অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই ব্লগে আমরা ১৮ ক্যারেট সোনা চেনার উপায়, ২২k স্বর্ণ চেনার উপায়, সিটি গোল্ড চেনার উপায়, ২১ কেরেট স্বর্ণ চেনার উপায়, সাদা স্বর্ণ চেনার উপায়, বিদেশি সোনা চেনার উপায়, হলমার্ক সোনা চেনার উপায় বাংলাদেশ, এবং হোয়াইট গোল্ড চেনার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আর্টিকেলের ভিতরে যা রয়েছে

স্বর্ণ চেনার উপায়: কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

সোনার বাজারে নকল ও ভেজাল সোনার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। তাই আসল স্বর্ণ চেনার উপায় জানা থাকলে আপনি নিরাপদে এবং নিশ্চিন্তে আপনার পছন্দের গয়না বা বিনিয়োগ করতে পারবেন।

হলমার্ক সোনা চেনার উপায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশে হলমার্ক সোনা চেনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক খেয়াল রাখা জরুরি। হলমার্ক সোনা মানে হচ্ছে সরকার অনুমোদিত পরীক্ষাগারে যাচাই করা বিশুদ্ধ সোনা, যার গায়ে নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন বা মার্কিং থাকে। বাংলাদেশে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (BSTI) হলমার্ক সনদ প্রদান করে। আসল হলমার্ক সোনার গায়ে সাধারণত সোনার ক্যারেট অনুযায়ী চিহ্ন থাকে, যেমন “22K”, “916” বা “18K”, “750” এবং এর সঙ্গে BSTI-এর লোগো বা অনুমোদিত সিলমোহর থাকে। এই চিহ্নগুলো গহনার এমন স্থানে খোদাই করা থাকে যা সহজে মুছে যায় না। এছাড়া বিশ্বস্ত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত জুয়েলারি দোকান থেকে কেনাকাটা করলে হলমার্ক সোনার সঙ্গে বিশুদ্ধতার সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়। সঠিকভাবে যাচাই করতে চাইলে সোনাটি BSTI অনুমোদিত পরীক্ষাগারে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করানো যায়। তাই হলমার্ক সোনা কেনার সময় চিহ্ন, ক্যারেট নম্বর ও দোকানের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।

  • ২৪ ক্যারেট সোনার হলমার্ক: 999
  • ২২ ক্যারেট সোনার হলমার্ক: 916
  • ২১ ক্যারেট সোনার হলমার্ক: 875
  • ১৮ ক্যারেট সোনার হলমার্ক: 750

গয়নার ভেতরে বা পাশে ছোট করে এই নম্বর ও লোগো খুঁজে নিন। হলমার্ক ছাড়া সোনা কেনা ঝুঁকিপূর্ণ।

২২k স্বর্ণ চেনার উপায়

২২ ক্যারেট স্বর্ণ চিনে নেওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা উচিত। প্রথমত, ২২ ক্যারেট স্বর্ণে সাধারণত “22K” বা “916” হ্যালমার্ক থাকে, যা Bureau of Indian Standards (BIS) কর্তৃক স্বীকৃত। এটি মানসম্পন্ন স্বর্ণের একটি নিশ্চয়তা। দ্বিতীয়ত, ২২ ক্যারেট স্বর্ণ তুলনামূলকভাবে নরম হয়, কারণ এতে ৯১.৬% বিশুদ্ধ স্বর্ণ থাকে এবং বাকি ৮.৪% ধাতব মিশ্রণ থাকে, যা এটিকে কিছুটা শক্ত করে। এছাড়াও, খাঁটি ২২ ক্যারেট স্বর্ণ সাধারণত হলদেটে উজ্জ্বল রঙের হয় এবং ঘষলে সহজেই দাগ পড়ে না। আরেকটি উপায় হলো পরীক্ষিত দোকান বা জুয়েলারি থেকে কেনা, যেখানে প্রোডাক্টের সাথে প্রমাণপত্র থাকে। সন্দেহ হলে স্বর্ণ টেস্টিং কিট বা অ্যাসে টেস্ট করে নেওয়া যেতে পারে।

  • ২২k গয়নায় “916” লেখা থাকবে।
  • গয়না একটু শক্ত হবে, কারণ এতে কিছুটা মিশ্র ধাতু থাকে।
  • হলমার্ক ও ২২k/916 চিহ্ন ভালোভাবে দেখে নিন।

২১ কেরেট স্বর্ণ চেনার উপায়

২১ ক্যারেট স্বর্ণ চেনার জন্য কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা জরুরি। ২১ ক্যারেট স্বর্ণে সাধারণত প্রায় ৮৭.৫% বিশুদ্ধ স্বর্ণ থাকে এবং বাকি অংশে অন্যান্য ধাতু মেশানো থাকে, যেমন তামা বা রুপা, যা এটিকে কিছুটা শক্ত করে তোলে। ২১ ক্যারেট স্বর্ণের রঙ ২২ ক্যারেটের তুলনায় একটু কম উজ্জ্বল এবং সামান্য ফিকে হতে পারে। এর গায়ে কখনো কখনো “21K” বা “875” লেখা থাকে, যা এর বিশুদ্ধতার সূচক। স্বর্ণ কেনার সময় সবসময় BIS হ্যালমার্ক আছে কি না তা যাচাই করা উচিত। এছাড়া ভালো মানের দোকান বা জুয়েলারি হাউজ থেকে কেনা উচিত, যেখানে প্রোডাক্টের সাথে বিশুদ্ধতার সার্টিফিকেট থাকে। চাইলে অ্যাসে টেস্ট বা স্বর্ণ পরীক্ষার মাধ্যমে ২১ ক্যারেট নিশ্চিত করা যায়।

স্বর্ণ চেনার উপায়: বাংলাদেশে আসল সোনা চেনার সহজ কৌশল

  • গয়নায় “875” লেখা থাকবে।
  • রঙ ২২k এর তুলনায় একটু হালকা।
  • হলমার্ক ও BIS লোগো খুঁজুন।

১৮ ক্যারেট সোনা চেনার উপায়

১৮ ক্যারেট সোনা চেনার কয়েকটি নির্ভরযোগ্য উপায় রয়েছে। প্রথমত, ১৮ ক্যারেট সোনায় সাধারণত “18K” বা “750” লেখা থাকে, যা এর খাঁটি সোনার পরিমাণ নির্দেশ করে (৭৫% খাঁটি সোনা এবং ২৫% অন্যান্য ধাতু)। দ্বিতীয়ত, এটি দেখতে তুলনামূলকভাবে একটু হালকা হলুদ রঙের হয়, কারণ এতে অন্যান্য ধাতু মিশ্রিত থাকে। তৃতীয়ত, অভিজ্ঞ জুয়েলাররা অ্যাসিড টেস্ট বা ইলেকট্রনিক গোল্ড টেস্টার ব্যবহার করে এর ক্যারেট যাচাই করতে পারে। এছাড়াও, ১৮ ক্যারেট সোনা কিছুটা শক্ত ও টেকসই হয়, যা ২২ বা ২৪ ক্যারেট সোনার চেয়ে বেশি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযোগী। বাজারে প্রতারণা এড়াতে, বিশ্বস্ত জুয়েলারি দোকান থেকে কেনা এবং সঠিক হলমার্ক চিহ্ন যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • “750” নম্বরটি গয়নায় খুঁজে নিন।
  • রঙ আরও হালকা এবং গয়না তুলনামূলক বেশি শক্ত।
  • সাধারণত ফ্যাশন জুয়েলারি বা ডিজাইন গয়নায় বেশি ব্যবহৃত হয়।

সিটি গোল্ড চেনার উপায়

সিটি গোল্ড চেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, বিশেষ করে যখন আপনি প্রকৃত স্বর্ণ ও নকল স্বর্ণের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে চান। সিটি গোল্ড সাধারণত খাঁটি স্বর্ণ দিয়ে তৈরি এবং এতে নির্দিষ্ট ক্যারেটের মান যেমন ২২ ক্যারেট বা ২৪ ক্যারেট উল্লেখ থাকে। এটি চেনার জন্য প্রথমে চেনের গায়ে খোদাই করা হলমার্ক বা ক্যারেটের চিহ্ন পরীক্ষা করা যায়। এছাড়াও চেনের ওজন ও রঙ লক্ষ্য করা উচিত — আসল সোনার চেন সাধারণত ভারি ও উজ্জ্বল হয়। ঘরে বসেই কিছু পরীক্ষা করা যায়, যেমন চুম্বকের সাহায্যে পরীক্ষা করা, কারণ খাঁটি সোনা চুম্বকে আকৃষ্ট হয় না। আরও নিশ্চিত হতে চাইলে সোনার দোকানে গিয়ে অ্যাসিড টেস্ট বা এক্সরে ফ্লুরোসেন্স (XRF) টেস্ট করা যেতে পারে। এসব উপায়ে আপনি সহজেই সিটি গোল্ড চেনার ব্যাপারে ধারণা পেতে পারেন।

  • গয়নার রঙ খুব বেশি উজ্জ্বল বা চকচকে হলে সন্দেহ করুন।
  • চুম্বক পরীক্ষা করুন; আসল সোনা চুম্বকে আকৃষ্ট হয় না।
  • সিরামিক প্লেটে ঘষে দেখুন, কালো দাগ পড়লে নকল।
  • ভিনেগার বা অ্যাসিড টেস্টে রঙ পরিবর্তন হলে নকল।

সাদা স্বর্ণ চেনার উপায় (হোয়াইট গোল্ড চেনার উপায়)

সাদা স্বর্ণ (White Gold) চেনার জন্য কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করতে হয়। এটি মূলত স্বর্ণ ও অন্যান্য ধাতুর মিশ্রণে তৈরি একটি সংকর ধাতু, যা সাধারণত রৌপ্য, প্যালাডিয়াম অথবা নিকেলের সাথে মিশ্রিত হয়। সাদা স্বর্ণ সাধারণত রুপালি-সাদা রঙের হয়ে থাকে এবং এর ওপর রৌডিয়াম নামক একটি ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়, যা এটিকে চকচকে ও টেকসই করে তোলে। একটি প্রকৃত সাদা স্বর্ণের গয়নার ভেতরের দিকে ক্যারেট মার্কিং (যেমন ১৮K, ১৪K) খোদাই করা থাকে, যা এর বিশুদ্ধতা বোঝায়। তাছাড়া, প্রকৃত সাদা স্বর্ণ অনেকটা হালকা ধূসর রঙের হয়ে থাকে, যেখানে সাধারণ রূপার মতো উজ্জ্বলতা থাকে না। সন্দেহ হলে, পেশাদার জুয়েলারির দোকানে পরীক্ষা করানোই সবচেয়ে ভালো উপায়।

  • এটি সাধারণত সোনা, নিকেল, প্যালাডিয়াম বা প্লাটিনামের মিশ্রণে তৈরি।
  • গয়নায় “18k”, “750”, “14k” ইত্যাদি লেখা থাকতে পারে।
  • হলমার্ক ও ক্যারেট নম্বর খুঁজুন।
  • সাদা স্বর্ণের রঙ একটু ধূসর বা উজ্জ্বল সাদা হবে, প্ল্যাটিনামের মতো নয়।
  • নকল হলে রঙ দ্রুত চটে যেতে পারে।

বিদেশি সোনা চেনার উপায়

বিদেশি সোনা চেনার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। প্রথমত, বিদেশি সোনায় সাধারণত হলমার্ক বা নির্দিষ্ট ক্যারেট চিহ্ন থাকে, যেমন “18K”, “22K”, বা “24K” – যা সোনার বিশুদ্ধতা বোঝায়। এছাড়া, বিদেশি সোনার গায়ে উৎপাদনকারী দেশের নাম বা কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃত লোগো থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিদেশি সোনার রঙ ও ঝিলিক সাধারণত একটু বেশি উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়, কারণ এতে বিশুদ্ধতা ও কারিগরি নিখুঁতভাবে বজায় থাকে। তৃতীয়ত, আসল বিদেশি সোনা চুম্বকে আকৃষ্ট হয় না, তাই এটি পরীক্ষা করে চুম্বক দিয়ে যাচাই করা যায়। প্রয়োজনে, স্বর্ণালঙ্কার বিশেষজ্ঞ বা জুয়েলারি দোকানে গিয়ে ডিজিটাল টেস্টিং মেশিনের মাধ্যমে যাচাই করাও নিরাপদ উপায়। এসব লক্ষণ দেখে কেউ সহজেই বিদেশি সোনা চেনার ধারণা পেতে পারেন।

  • গয়নায় আন্তর্জাতিক হলমার্ক (যেমন 916, 750) ও ব্র্যান্ডের লোগো খুঁজুন।
  • বিদেশি সোনার রঙ ও ফিনিশিং দেশীয় সোনার তুলনায় ভিন্ন হতে পারে।
  • বিদেশি গয়না কিনলে অবশ্যই সার্টিফিকেট চেয়ে নিন।

ঘরোয়া স্বর্ণ চেনার উপায়

ঘরোয়া স্বর্ণ চেনার কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় আছে, যা ব্যবহার করে আপনি আসল ও নকল স্বর্ণের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারেন। প্রথমত, আসল স্বর্ণ চুম্বকে আকৃষ্ট হয় না, তাই একটি ছোট চুম্বক দিয়ে পরীক্ষা করলে যদি চেনটি চুম্বকে আকৃষ্ট হয়, তবে তা সম্ভবত নকল। দ্বিতীয়ত, ঘর্ষণ পরীক্ষা—একটি সাদা সিরামিক টাইল বা পাথরে চেনটি ঘষে দেখুন। যদি সোনালি রেখা পড়ে, তবে তা স্বর্ণ হতে পারে, আর কালো রেখা হলে তা নকল। এছাড়া আসল স্বর্ণে সাধারণত কোনো মরিচা বা দাগ পড়ে না এবং এর ওজন তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। আরও নিশ্চিত হতে চাইলে ঘরে থাকা সাধারণ অ্যাসিড যেমন ভিনেগার বা লেবুর রস দিয়ে অল্প করে পরীক্ষা করা যায়—আসল স্বর্ণে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না, কিন্তু নকল হলে রঙ পরিবর্তন হতে পারে। তবে এসব পরীক্ষার পরও নিশ্চিত না হলে, পেশাদার জুয়েলারির সাহায্য নেওয়াই উত্তম।

চুম্বক পরীক্ষা

আসল সোনা চুম্বকে আকৃষ্ট হয় না। গয়নার কাছে শক্তিশালী চুম্বক ধরুন, আকৃষ্ট হলে নকল।

পানিতে ডুবানো

একটি পাত্রে পানি নিয়ে গয়না ফেলুন। খাঁটি সোনা ডুবে যাবে, নকল সোনা ভাসবে।

সিরামিক প্লেট টেস্ট

সাদা সিরামিক প্লেটে গয়না ঘষুন। কালো দাগ পড়লে নকল, সোনালি দাগ হলে আসল।

ভিনেগার পরীক্ষা

গয়নায় কিছু ফোঁটা ভিনেগার দিন। রঙ পরিবর্তন হলে নকল, না হলে আসল।

অ্যাসিড টেস্ট

নাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে গয়না পরীক্ষা করুন। রঙ পরিবর্তন না হলে আসল, সবুজ বা অন্য রঙ হলে নকল।

কামড় টেস্ট

খাঁটি সোনা নরম, হালকা কামড় দিলে দাগ পড়ে। তবে এই পদ্ধতি সবসময় নির্ভরযোগ্য নয়।

স্বর্ণের ক্যারেট ও বিশুদ্ধতা টেবিল

ক্যারেট বিশুদ্ধতা (%) হলমার্ক নম্বর
২৪ ৯৯.৯৯ 999
২২ ৯১.৬৭ 916
২১ ৮৭.৫ 875
১৮ ৭৫ 750
১৪ ৫৮.৩ 583

কেন হলমার্ক সোনা কিনবেন?

হলমার্ক সোনা কেনার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এর বিশুদ্ধতা ও মানের নিশ্চয়তা। হলমার্ক হলো সরকার স্বীকৃত একটি মানচিহ্ন, যা সোনার গহনার খাঁটি ও নির্ধারিত ক্যারেট অনুযায়ী বিশুদ্ধতা যাচাই করে থাকে। এটি ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (BIS) দ্বারা অনুমোদিত, যা ক্রেতাকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করে। হলমার্ক থাকা সোনা কিনলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনি যে ক্যারেটের সোনা কিনছেন, তা সত্যিই ততটাই খাঁটি। এছাড়া ভবিষ্যতে গহনা বিক্রয় কিংবা বন্ধক রাখার সময়ও হলমার্ক সোনার মূল্য বেশি পাওয়া যায়। তাই সঠিক মূল্য ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিতে সবসময় হলমার্কযুক্ত সোনা কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।

  • হলমার্ক সোনা মানেই নির্ভরযোগ্যতা।
  • বিক্রির সময় সহজে দাম পাবেন।
  • নকল বা ভেজাল সোনার ঝুঁকি কম।

স্বর্ণ চেনার উপায়: কিছু সতর্কতা

স্বর্ণ চেনার উপায় সম্পর্কে কিছু সতর্কতা অনুসরণ করলে আপনি নকল স্বর্ণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। প্রথমত, খাঁটি স্বর্ণ সাধারণত ২২ ক্যারেট বা ২৪ ক্যারেট হয়ে থাকে, তাই স্বর্ণ কিনতে গেলে ক্যারেট নম্বর দেখে নেওয়া জরুরি। দ্বিতীয়ত, আসল স্বর্ণে কোনো দাগ বা ছোপ থাকে না এবং তা চকচকে ও মসৃণ হয়ে থাকে। তৃতীয়ত, খাঁটি স্বর্ণে সাধারণত ‘BIS hallmark’ বা সরকারি সীলমোহর থাকে, যা স্বর্ণের বিশুদ্ধতা প্রমাণ করে। এছাড়া, নকল স্বর্ণ সহজেই রঙ পরিবর্তন করে বা ব্যবহারে মলিন হয়ে যায়। সন্দেহ হলে স্বর্ণ দোকানে গিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়াই উত্তম। সবশেষে, স্বর্ণ ক্রয়ের রসিদ অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে, কারণ তা ভবিষ্যতে প্রমাণ হিসেবে কাজ করতে পারে। এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে আপনি প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারবেন।

  • ছোট দোকান বা অজানা উৎস থেকে সোনা কিনবেন না।
  • সবসময় হলমার্ক, ক্যারেট নম্বর ও সার্টিফিকেট যাচাই করুন।
  • দাম তুলনা করুন এবং সন্দেহ হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

বাংলাদেশে স্বর্ণ কেনার সময় করণীয়

বাংলাদেশে স্বর্ণ কেনার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত, যাতে প্রতারণার শিকার না হয়ে নিরাপদ ও সঠিকভাবে লেনদেন করা যায়। প্রথমেই, স্বর্ণ কেনার সময় নির্ভরযোগ্য ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত জুয়েলারি দোকান থেকে কেনা উচিত। দোকানে গিয়ে স্বর্ণের মান নির্ধারণে ‘হলমার্ক’ চিহ্ন আছে কি না তা খতিয়ে দেখা জরুরি, কারণ হলমার্কযুক্ত স্বর্ণই বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা দেয়। প্রতিটি পণ্যের ওজন, ক্যারেট (যেমন ২২ ক্যারেট বা ২৪ ক্যারেট), ও দাম ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে। বর্তমান বাজারমূল্য জেনে নিয়ে দরদাম করাও একটি বুদ্ধিমানের কাজ। কেনার সময় অবশ্যই ক্রয়ের রসিদ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি, ব্যবহৃত স্বর্ণ বা পুরাতন গহনা কিনলে তা যাচাই করিয়ে নেওয়া নিরাপদ। এসব দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশে স্বর্ণ কেনার সময় ঝুঁকি কমে যায় এবং সঠিক পণ্য কেনা সম্ভব হয়। স্বর্ণ চেনার উপায়: বাংলাদেশে আসল সোনা চেনার সহজ কৌশল

  • বিশ্বস্ত ও বড় জুয়েলারি দোকান থেকে কিনুন।
  • ক্যারেট, হলমার্ক ও ওজন যাচাই করুন।
  • বিদেশি সোনা কিনলে আন্তর্জাতিক হলমার্ক ও সার্টিফিকেট চেক করুন।
  • সিটি গোল্ড বা প্লেটেড গয়না কিনলে সতর্ক থাকুন।

বিশেষ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

২২ ক্যারেট সোনার গুণ চেনার উপায় কী?

২২ ক্যারেট সোনা চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো হলমার্ক ও ক্যারেট নম্বর দেখা। গয়নায় সাধারণত “916” নম্বরটি খোদাই করা থাকে, যা ৯১.৬% বিশুদ্ধতার নির্দেশক। এছাড়া, রঙ উজ্জ্বল ও টেকসই হয় এবং গয়না তুলনামূলক শক্ত থাকে। বিশ্বস্ত দোকান থেকে হলে BIS হলমার্ক ও সার্টিফিকেটও যাচাই করা উচিত।

নকল সোনা চেনার উপায়?

নকল সোনা চেনার জন্য কিছু ঘরোয়া পরীক্ষা রয়েছে। যেমন, চুম্বক পরীক্ষা—আসল সোনা চুম্বকে আকৃষ্ট হয় না। সিরামিক প্লেটে ঘষলে কালো দাগ পড়লে নকল। ভিনেগার বা অ্যাসিড টেস্টে রঙ পরিবর্তন হলে সেটি নকল সোনা। এছাড়া, গয়নায় মরচে পড়া বা অস্বাভাবিক উজ্জ্বলতা থাকলেও সন্দেহ করা উচিত।

স্বর্ণ কিভাবে পরীক্ষা করব?

স্বর্ণ পরীক্ষা করতে হলে প্রথমে হলমার্ক, ক্যারেট নম্বর ও ওজন যাচাই করুন। ঘরোয়া পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে চুম্বক টেস্ট, ফ্লোট টেস্ট (পানিতে ডুবে যায় কিনা দেখা), সিরামিক প্লেট টেস্ট, অ্যাসিড টেস্ট ও ভিনেগার টেস্ট। এছাড়া, বিশ্বস্ত জুয়েলার্সের কাছে গিয়ে প্রফেশনাল টেস্ট করানো ভালো।

কিভাবে ভালো সোনা নির্বাচন করব?

ভালো সোনা নির্বাচন করতে হলে হলমার্ক ও ক্যারেট নম্বর দেখে কিনুন। গয়নার ওজন ও বিশুদ্ধতা যাচাই করুন এবং বিশ্বস্ত দোকান বা ব্র্যান্ড থেকে কিনুন। গয়নার সার্টিফিকেট ও রিটার্ন পলিসি দেখে নিন। বাজারের তুলনায় অস্বাভাবিক কম দামে সোনা বিক্রি হলে সতর্ক থাকুন।

হলমার্ক সোনা চেনার উপায় বাংলাদেশ?

বাংলাদেশে হলমার্ক সোনা চেনার জন্য গয়নায় BIS লোগো, নির্দিষ্ট ক্যারেট নম্বর (যেমন ২২K৯১৬, ২১K৮৭৫, ১৮K৭৫০) ও HUID নম্বর খুঁজে বের করুন। হলমার্ক ছাড়া সোনা কেনা ঝুঁকিপূর্ণ।

২২k স্বর্ণ চেনার উপায়?

২২k স্বর্ণে “916” নম্বর খোদাই থাকে, যা ৯১.৬% বিশুদ্ধতার চিহ্ন। গয়নায় হলমার্ক ও ব্র্যান্ডের লোগো থাকলে সেটি আসল ২২k সোনা বোঝায়। রঙ উজ্জ্বল ও গয়না শক্ত হয়।

১৮ ক্যারেট সোনা চেনার উপায়?

১৮ ক্যারেট সোনা চেনার জন্য “750” নম্বর খুঁজুন, যা ৭৫% বিশুদ্ধতার সংকেত। রঙ তুলনামূলক হালকা ও গয়না শক্ত হয়। সাধারণত ফ্যাশন গয়নায় বেশি ব্যবহৃত হয়।

বিদেশি সোনা চেনার উপায়?

বিদেশি সোনা সাধারণত আন্তর্জাতিক হলমার্ক ও ক্যারেট নম্বরসহ আসে। গয়নায় ৯১৬, ৭৫০ বা ৯৯৯ নম্বর, ব্র্যান্ড লোগো ও আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট দেখে নিশ্চিত হন।

সাদা স্বর্ণ চেনার উপায়?

সাদা স্বর্ণ বা হোয়াইট গোল্ড চেনার জন্য গয়নায় “18k”, “14k” বা “750” নম্বর খুঁজুন। রঙ ধূসর-সাদা ও চকচকে হবে। হলমার্ক ও ক্যারেট নম্বর দেখে নিশ্চিত হন।

সিটি গোল্ড চেনার উপায়?

সিটি গোল্ড সাধারণত গোল্ড প্লেটেড বা স্বল্প ক্যারেটের সোনা। গয়নার রঙ বেশি উজ্জ্বল হলে, চুম্বক আকৃষ্ট হলে বা সিরামিক টেস্টে কালো দাগ পড়লে সেটি নকল বা প্লেটেড সোনা হতে পারে। বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনুন এবং হলমার্ক দেখে নিশ্চিত হন।

উপসংহার

সবশেষে বলা যায়, স্বর্ণ চেনার উপায় জানা প্রতিটি ক্রেতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে আসল ও নকলের মধ্যে পার্থক্য করা সহজ হয় এবং প্রতারণার সম্ভাবনা কমে যায়। ক্যারেট নম্বর, হলমার্ক চিহ্ন, রঙ, ওজন এবং চুম্বক পরীক্ষা—এই সকল উপাদান দেখে প্রাথমিকভাবে সোনার খাঁটি হওয়া যাচাই করা যায়। তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হলো প্রামাণিক দোকান থেকে হলমার্কযুক্ত সোনা কেনা এবং প্রয়োজনে পেশাদার পরীক্ষাগারে গিয়ে যাচাই করা। জেনে-বুঝে স্বর্ণ কেনা শুধু নিরাপদই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে মূল্য রক্ষা করতেও সহায়ক।

আপনার জন্য চূড়ান্ত পরামর্শ:

  • সবসময় হলমার্ক ও ক্যারেট নম্বর দেখে সোনা কিনুন।
  • সন্দেহ হলে ঘরোয়া কৌশল ব্যবহার করুন।
  • বড় ও বিশ্বস্ত দোকান থেকে সোনা কিনুন।
  • নকল সোনার ফাঁদে পড়ে যেন আপনার কষ্টের টাকা নষ্ট না হয়।

আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, কমেন্টে জানান। ব্লগটি শেয়ার করুন এবং আপনার বন্ধুদেরও সচেতন করুন—স্বর্ণ চেনার উপায় জানুন, নিরাপদে বিনিয়োগ করুন!

Scroll to Top